ভারত ভেঙে স্বাধীন রাষ্ট্র খালিস্তান গড়ার জন্য পাঞ্জাবের শিখদের উস্কানি দিচ্ছে পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিখস ফর জাস্টিস (এসএফজে) নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে পাঞ্জাব প্রদেশকে বিচ্ছিন্ন করার এই চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। এমন অভিযোগ উঠেছে তুলেছে শিখ ধর্মাবলম্বীদেরই আরেকটি গ্রুপ।২০০৭ সালে গঠিত হওয়া এসএফজে পাঞ্জাবকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন ‘খালিস্তান’ রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। পাকিস্তানের সহায়তায় তারা ২০২০ সালে গণভোটের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে। এই সংগঠনের প্রধান হিসেবে আছেন গুরপাতওয়ান সিং পান্নু এবং অবতার সিং পান্নু নামের দুই ভারতীয় বংশদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। সংগঠনটির অধিকাংশ নেতাই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। এরা পাঞ্জাবের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোকে একত্রিত করে তাদের ফান্ডিংয়ের মধ্যমে স্বাধীন ‘খালিস্তান’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা করছে।
স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনে উস্কানি দেয়ায় গত ১৬ জুলাই নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে আইএসআইয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ভারতীয় শিখদের একাংশ।
ইন্ডিয়া ব্লুমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন- শিখদের আরেক সংগঠন জেএজিও’র আন্তর্জাতিক প্রেসিডেন্ট মনোজিৎ সিং। বিক্ষোভকারীরা পান্নু ও আইএসআই প্রধানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।ভারত সরকার গুরুপাতওয়ান সিং পান্নুকে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে। তিনি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও চীনসহ বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার নির্দেশে ভারতে শিখ বিদ্রোহ ও খালিস্তান আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিক্ষোভকালে মনোজিৎ সিং বলেন, শিখরা ভারতে উন্নতি করছে, তারা ভাল আছে। আমরা পান্নুর কোনো ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ কর্মকাণ্ডের সমর্থন করি না। শিখদের প্রতিনিধি হিসেবে তার কোনো কাজ করার অধিকার নেই।
এর আগে গত ১৫ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিখ ফর জাস্টিস সংগঠনের সদর দপ্তর থেকে এক ভিডিও বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে দিল্লিতে বসবাসকারী শিখদের ক্ষমতাসীন ভারত সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করার আহ্বান জানানো হয়। ওই ভিডিও বার্তায় পান্নু পাঞ্জাবকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন খালিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণভোট নেওয়ারও আহ্বান জানান।
শিখস ফর জাস্টিসকে এরিমধ্যে নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার। গুগল সম্প্রতি প্লে-স্টোর থেকে ‘২০২০ শিখ গণভোট’ নামের তাদের একটি অ্যাপ মুছে ফেলেছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে পাঞ্জাবে গণভোটের জন্য মানুষ সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এই অ্যাপের ভোটারদের ডাটা yestokhalistan.org নামের একটি ওয়েবসাইটে যাচ্ছিল। এই ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করছিল এসজেএফ এর সদস্যরা।
পাঞ্জাব প্রদেশের সংখ্যাগুরু শিখ ধর্মাবলম্বীদের একাংশ কয়েক যুগ ধরে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘স্বাধীন খালিস্তান’ রাষ্ট্র গড়ার আন্দোলন চালিয়ে আসছে। গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে ওই আন্দোলন জোরালো আকার ধারণ করেছিলো। ১৯৮৪ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখরাই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করে। এছাড়া সে সময় আয়ারল্যান্ড উপকূলে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি প্লেনও বিধ্বস্ত করে তারা। ওই ঘটনায় যাত্রী ও ক্রুসহ ৩২৯ জন নিহত হন। পরবর্তীতে ৯০ দশকে ভারত সরকারের ব্যাপক পুলিশি অভিযান, ধরপাকড় ও জনসমর্থন হারানোর ফলে স্তিমিত হয়ে পড়ে স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলন। কিন্তু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগে বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখদের সেই আন্দোলন আবার দানা বাধছে বলে আশঙ্কা করছে ভারত। এর এতে পাকিস্তানের মদদ আছে বলে মনে করছেন অনেকে।