মাওঃ হাফেজ শরীফুল ইসলাম
যে বিষয়টি জানা খুবই জরুরি,
কুরবানীর দিনসমূহ তথা ১০,১১ এবং ১২ই জিলহজ্জ্ব এ তিনদিনে নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ অতিরিক্ত যে ব্যক্তির কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্য বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা এর সমমূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকবে, তার উপর কুরবানী করা আবশ্যক।
এই বিধান কেবল পুরুষদের জন্য না।
মহিলাদের জন্যও। মানে যে ব্যক্তির কাছেই এই পরিমাণ সম্পদ থাকবে তার উপরই কুরবানি ওয়াজিব। এখানে পুরুষ-মহিলার কোন ব্যবধান নাই। কিন্তু আমাদের সমাজের দুঃখজনক চিত্র হলো, মেয়েদেরকে কুরবানি করতে দেখা যায় না বললেই চলে। অনেকে তো এটা জানেই না যে, মেয়েদের উপরও সম্পদের ভিত্তিতে কুরবানি ওয়াজিব হয়।
একজন নারী তার স্বর্ণালঙ্কারের যাকাত দিচ্ছে। তাহলে নিশ্চিতভাবেই তো সেই সম্পদ বর্তমান থাকলে তার উপরও আলাদা করবানি ওয়াজিব হচ্ছে। কিন্তু তিনি সেটা করছেন না।
বরং স্বামী যে কুরবানি দিচ্ছেন সেটাকেই যথেষ্ট বলে ধরে নিচ্ছেন।
অথচ স্বামীর কুরবানি তো স্বামীর মালিকানাধীন সম্পত্তির।
স্ত্রীর সম্পত্তির কারণে তার উপর যে কুরবানি ওয়াজিব হয়েছে সেটা তো আর স্বামীর কুরবানি দ্বারা আদায় হবে না।
দুইটা সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।
আদায়ও করতে হবে আলাদাভাবে। এটা অনেকে জানেও না, বুঝেও না।
ফলে কুরবানি না দেবার গুনাহ কামিয়ে নিচ্ছেন। অবশ্য স্বামী যদি স্ত্রীর সম্মতিতে তার জ্ঞাতসারে নিজের কুরবানি কারার পাশাপাশি স্ত্রীর কুরবানিটাও আদায় করে দেয় তাহলে স্ত্রীর কুরবানি আদায় হয়ে যাবে।
আমাদের দেশে মিম্বারে-মেহরাবে বিষয়টা তেমন আলোচিত হয় না। কুরবানি বিষয়ক বইপত্রেও এটাকে ভেঙ্গে বলা হয় না।
হয়তো মহিলাদের কথা আলাদাকরে না বলে সাধারণভাবে বলে যাওয়াকেই লেখকরা যথেষ্ট মনে করেন। কিন্তু অবস্থা এখন এই পর্যায়ে চলে এসেছে বলে মনে হচ্ছে যে, এটা নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে আলোচনা করা উচিত বলে মনে হচ্ছে। অন্তত বিগত দুই তিন দিনে যা অভিজ্ঞতা হলো তা থেকে এই মনে হওয়াটাকে উড়িয়ে দেবার মোটেই সুযোগ নাই।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, কেউ যদি ওয়াজিব হবার পরে কুরবানির দিনগুলোতে কুরবানি না করেন তাহলে কুরবানির ওয়াজিবটা তার উপর থেকে যায়। পরবর্তীতে সমপরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে তিনি যিম্মা থেকে মুক্ত হবেন। তার আগে নয়। তো যারা অনেক বছর ধরে কুরবানি ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও কুরবানি করছেন না তারা সমপরিমাণ টাকা সদকা করবেন।
নইলে কুরবানির দায়টা থেকেই যাবে।
[স্বামী যদি স্বেচ্ছায় স্ত্রীর পক্ষ হতে আলাদা করে আদায় করে তাইলে তো ভালো।
না হয় নিজের পক্ষ হতে কুরবানীর কোন গরুর ৭ ভাগের এক ভাগের টাকা দিয়ে কুরবানী দিলেই হবে]